শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে সৈকতের ওপর আছড়ে পড়া ঢেউ ক্রমশ কুয়াকাটার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে। সৈকতের ব্যাপ্তি একই থাকলেও প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে সৈকতের পুরানো দৃশ্য। এভাবে সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নারিকেল ও ঝাউবনে পর্যটকদের জন্য নির্মিত পিকনিক স্পটের অবশিষ্ট অংশ। গত কয়েক দিনে সাগর প্রচন্ড উত্তাল থাকায় সৈকতের ওপর আছড়ে পড়া ঢেউ তার নাগালে পাওয়া সবকিছু যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সৈকতের লাগোয়া আবাসিক হোটেল কিংস এর পাকা ভবনটির একাংশ উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপটায় ভেঙ্গে নিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে পাবলিক টয়লেট ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। ঢেউয়ের তান্ডবে গাছপালা উপড়ে লাশের মতো পড়ে আছে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সৈকতের দৃষ্টিনন্দন ছাতা বেঞ্চ ও অস্থায়ী ঝিুনক মার্কেটটিও। গত তিন/চারদিন ধরে চলমান অমাবশ্যার জো কুয়াকাটা সৈকতের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ফুট পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সৈকতে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। একই সাথে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে বনবিভাগের রিজার্ভ ফরেষ্ট ও কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান। চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুয়াকাটায় অবস্থিত সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে খ্যাত মসজিদ ও মন্দিরটি। এছাড়া বাধের বাইরে থাকা পাকা আধাপাকা অনেকগুলো আবাসিক হোটেল, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে সদ্য চালু হওয়া ট্যুরিজম পার্কটি। সমুদ্রের এমন রুদ্র মূর্তি গত ১০ বছরে আর দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিমত। গত ২-৩ দিনে ২০ থেকে ২৫ফুট ভূ-ভাগ ভেঙ্গে সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ জিও বস্তা ফেলে পাবলিক টয়লেটটি রক্ষার চেষ্টা করলেও আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই পাবলিক টয়লেট ও কিংস হোটেলটি সমুদ্রে গর্ভে চলে যাবার প্রবল আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সৈকতের পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঝিনুকের দোকানদার মোঃ সৈয়দ যুগান্তরকে জানান, মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান তিনি, সকালে এসে দেখেন তার দোকানের মালামাল ও দোকানের একাংশ সমুদ্রে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু তার দোকান নয়, এমন প্রায় অর্ধশত দোকান ও দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেও দাবি ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সৈয়দের। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জালাল জানান, ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তিল তিল করে গড়ে তোলা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সমুদ্রের গ্রাসে চলে গেছে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢেউয়ের ঝাপটায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ দোকানীরা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে মহসড়কের শেষ সীমানায়। কোথাও দাঁড়ানোর স্থান নেই। পর্যটকরা সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ঢেউ এসে তাদের উপর আছড়ে পড়ছে।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ডকুমেন্টারী ফ্লিম মেকার সন্দীপ বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে কুয়াকাটায় আসেন। ১২ বছর আগে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে সৈকত দেখেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেভরা কুয়াকাটার এখনকার চিত্র দেখে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার তিনি কুয়াকাটা সৈকতে ভ্রমণে এসে এমন বিধস্ত চিত্র দেখে বিস্মিত হয়েছেন। তার সামনেই ঢেউয়ের ঝাপটায় নারিকেল, আম, তালগাছসহ কয়েকটি গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে। তার মতে কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় জরুরী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। অন্যথায় সূর্যোদয় সূর্যাস্তের এই বিরল সৌন্দর্য মন্ডিত কুয়াকাটা পযর্যটনের মানচিত্র থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে। কুয়াকাটা প্রেসক্লাব ও কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন (কুটুম) এর সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি দৃশ্যমান কোন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। বিভিন্ন সময় স্বল্পমেয়াদি যেসব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে তা নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। দরকার দ্রুত এবং সময় উপযোগী বাস্তবমুখি পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। কুয়াকাটা পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন, সমুদ্র ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ নেবার সক্ষমতা কুয়াকাটা পৌরসভার নেই। দরকার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, যা পাউবো কর্তৃপক্ষ এ নিতে পারে। পৌরসভার পক্ষ থেকে জিরো পয়েন্টে কিছু জিও বস্তা ফেলে সাময়িকভাবে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে, যা দিয়ে সৈকত রক্ষা করা সম্ভব নয়।